শুক্রবার, জুলাই ২২, ২০১৬

হাড্ডি গুড়ো করে ফেলবো!

ঝাড়ু চেনো, ঝাড়ু! ঠেঙ্গি, শরকি!
দাঁ চেনো! রামদা, বটি! খোন্তা, বল্লম, চাপাতি!
সুন্দরী বা গজারীর লাঠি নিশ্চই চেনো!
পূর্বপুরুষের কৃতকর্মের ধারাবাহিকতায় এক পা এগিয়েছ তো
হাড্ডি গুড়ো করে ফেলবো!

অনেক জ্বালাতন সহ্য করেছে আমার পূর্বপুরুষ
টানা চারটি দশক আমরা জানতেই পারিনি সত্য
সব সত্যকে চাপা দেয়ার নানাবিধ অপপ্রয়াস হয়েছে!
যারা তা করেছে হয় তারা মানসিক বিকারগ্রস্থ
নয়তো সংক্রামক ব্যাধি-আক্রান্ত ভারসাম্যহীন!
মুখে ফেনাতুলে আবোল-তাবোল কি বলে যায়
নিজেরাই বোঝে কিনা সন্দেহ!
অবশেষে প্রকাশ্যেই হয় দিগম্বর দশা!

দেখেও শেখোনা!
পৃথিবীতেই পেয়ে যেতে হয়
প্রতিটি কৃতকর্মের ফল!

তোমাদের অজ্ঞ বলে ধিক্কার দেবোনা
কারণ, তোমাদের আশৈশব নানা কৌশলে
ওদের স্বার্থ রক্ষার জন্য অজ্ঞ করে রাখা হয়েছে!

এখনো সময় আছে
ভুজুং ভাজুং ছেড়ে
অজ্ঞতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে আলোতে আসো
ইতিহাসের মাঝ্ডালে বাঁদর-ঝোলা ঝুলোনা!
সন্ধান করো শেকড়ের
জানো প্রকৃত ইতিহাস
মুর্খ্যের মতো বিকৃত ধারায় নষ্ট হয়োনা!
নষ্ট করোনা কষ্টার্জিত স্বাধীনতা আর
তোমার-আমার দেশের ধন সম্পদ সম্ভ্রম!

আর যদি একান্ত এক্গুয়েমিতেই থাকো!
বলেছি না!
লাঠি, ঠেঙ্গি, সুন্দরীর কঁচা!
হাড্ডি গুড়ো করে ফেলবো!

●●● প্রদ্যোত

২৫ মার্চ (১)

আজ এখানে অনেকের আনাগোনা
শোকের পোশাকে সুগন্ধির প্রলেপ
চারিদিকে আলো আর রঙের ঘনঘটা

অথচ,সেদিন! ঠিক এই সময়ে, এই একই স্থান
ছিল নিকষ অন্ধকার আর শ্মশানের নিস্তব্ধতা
চারিদিকে আতংক! ব্লাক-আউট!

ঘুটঘুটে কালো অন্ধকারে একদল হায়না রক্ত-পিপাসায় উন্মত্ত
সাজোয়া ট্যাংক ছুটছে যত্রতত্র
বেশুমার এলোপাতাড়ি মেশিনগানের গুলি
কি এক বিভীষিকা! অপারেশন সার্চ-লাইট(?)
কি এক অবর্ণনীয় পাশবিকতা! অগনিত মৃত্যুর কলংকিত অধ্যায়

রাজপথ, বাসাবাড়ি, বিপনিকেন্দ্র, রাজারবাগ পুলিশ-লাইন
অলিগলি সর্বত্র নির্বিচার পাশবিক নিষ্ঠুরতায়
বুলেটে, বেয়নেটে, বুটের আঘাতে
ব্যথাতুর রক্তস্নাত রাজধানী!

মুহুর্মুহু গুলির শব্দে উদ্ভ্রান্ত মানুষ ছুটছে জীবনকে মুঠোয় পুরে
পিছনে তেড়ে আসছে বুলেট
কখন যে হাত ফসকে পরে গেছে কোলের শিশু!
হয়তো পায়ের নিচে কিংবা সাজোয়ার চাকায় পিষ্ট হয়ে
থেতলে বিকৃত হয়েছে মিষ্টি চাঁদমুখখানি!
এখানে-সেখানে অসংখ্য আহতের আর্তনাদ
কি নারকীয় সেই রাত!
একসাথে এত লাশ দেখেনি বাংলা আগে!

আজ যারা সমাগত এখানে
কন্ঠে কন্ঠ মেলাতে,ফেলতে দুফোঁটা অশ্রু
আসুন! অন্তরের ঘুমন্ত মানুষটিকে জাগিয়ে
আসুন! স্মৃতির জানালা খুলে দেই
বহুদিন মিথ্যার চাঁদর মুড়ি দেয়া সত্যকে উদঘাটন করি
হারানো যন্ত্রনাকে শক্তিতে রূপ দেই
চেতনার আলো জ্বালি ষোলো কোটি প্রদীপের
দূর করি আঁধারের বিভীষিকা
মঙ্গলালোকে দীপ্যমান হোক
একটি জাগ্রত বাংলাদেশ!

●●●প্রদ্যোত

মঙ্গলবার, জুলাই ১৯, ২০১৬

ছন্দরাজ্য গন্ধময়!

ছন্দের রাজ্যেতে
ছন্দের গোলমাল,
কবিতার লাইন যেন
ড্রেনের জঞ্জাল।
আবেগের বিভ্রাট,
বেসামাল ছন্দ,
কবিতার দেহ হতে
আসে দুর্গন্ধ।
দেশ জুড়ে আছে যত
হবু গবু কবি,
কাকের বকের ঠ্যাং
লেখে তারা সবই ।
বাথরুমে, টয়লেটে
কবিতার ছড়াছড়ি,
প্রেমে ছেঁকা খেয়েইত
কবিতায় হাতেখড়ি।
ওভারলোড হয়ে গেছে
কবিতার ভাণ্ড,
ফেদুরামও লেখে হায়!
এ কেমন কাণ্ড!

- প্রদ্যোত

নিরুদ্দেশ

নশ্বর দেহে ভস্মের পথে
ছুটছি সবাই ছুটছি
তবু অমরত্বের প্রত্যাশাতে
অযথাই মাথা কুটছি
জানছিনা কেউ কোথায় শুরু
কোথায় চলার শেষ
ঘোরের মাঝে ঘুরে ঘুরে
হচ্ছি নিরুদ্দেশ

© প্রদ্যোত

কিসের স্বাধীনতা!

যেখানে স্বাধীনতার
তাল্লিশ বছর পরও
পরাজিত শক্তির দোসরদের পৈশাচিক দাপটে
তটস্থ থাকতে হয় প্রতিনিয়ত
সেখানে কিসের বিজয়! কিসের স্বাধীনতা!
যেদিন একটিও দেশদ্রোহী থাকবেনা এই মাটিতে
সেদিন বুঝবো স্বাধীনতাএসেছে!
প্রতিটি মানুষের মনে পরিপূর্ণ দেশপ্রেম জন্মালে
বুঝবো স্বাধীনতা এসেছে!
ষোলো কোটি মানুষের মৌলিক চাহিদা মিটলে
বুঝবো স্বাধীনতা এসেছে!
সবাই সমস্বরে যেদিন জাতীয় সংগীত গাইবে
সেদিন বুঝবো স্বাধীনতা এসেছে!
ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে স্বাধীনতা উৎসবে
জাতীয় সংগীত গাইতে চাইনা আর!

© প্রদ্যোত

আমি অভিনেতা হতে আসিনি

আমার চারপাশে অগনিত কুশীলব
যে যার পারফরমেন্স দেখাতে উদগ্রীব
দুর্দান্ত অভিনয় করে যাচ্ছে সবাই
শুধু আমি যেন কেন পেরে উঠছিনা
বারবার থমকে যাচ্ছি একটা জায়গায়
কি করব না করব ভেবেই সময় করছি পার
জীবন নাটকে সুচারু প্রানবন্ত উপস্থাপন আবশ্যক
যারা পটু অভিনেতা, তাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন
না চাইতেই হাতের
কাছে পৌছে যায় সব মওকা
বিলাস বৈভব সব উছলে পরে
এই অভিনয় মানব জীবনে সার্বজনীন
তাই সকলে কম্প্রমাইজ করে নেয় সহজেই
আমি পারিনা, শুধু দেখি -
পয়মন্ত কুশিলবগন অতিক্রম করে যায় আমাকে
দেখি মুখস্ত মানুষের কাফেলা
কি নির্ধিদায় আমাকে পেছনে ফেলে
হাস্যকর দ্রুততায় এগিয়ে যায়
সবাই ব্যস্ত দিনমান নয়টা-পাঁচটা'র চক্করে
প্রতিদিনের একই ভূমিকায় অভিনয় করতে
এক ঘেয়েমিপনাও ছোয়না তাদের
আমি অমন রোবটিক জীবন-যাপন করতে পারবনা
কারণ আমি স্বাধীনতাকামী বিপ্লবী
আমি অভিনেতা হতে আসিনি

© প্রদ্যোত

ক্ষুধার জ্বালা

আশৈশব আমরা কেবল
ক্ষুধার জ্বালায় মরি,
যেথায় যা পাই, তা সবই খাই
খাবার পেলে হুমড়ি খেয়ে পড়ি।
বড় পেটের বড্ড ক্ষুধা
খাচ্ছে বাড়ি-গাড়ি,
তাপরেও মেটেনা সাধ
চাচ্ছে কাড়ি কাড়ি।
ছোট্ট খোকার দুধের তৃষা
মায়ের কোলের মাঝে,
গরুর দুধে ফিডার ভরে
মা চলে যায় কাজে।
কারো ক্ষুধা জমি দখল
কারো ক্ষুধা মানি,
কারো আবার যৌনক্ষুধা
রাতের মক্ষীরাণী।
নিরন্নেরই ক্ষুধা পেটের
চায় দু-বেলা ভাত,
ফুটপাথের ঐ পাগলীটার
ক্ষুধায় কাটে রাত।
ক্ষুধার জ্বালায় কেউ খায় ঘুষ,
ক্ষুধায় ক্ষুধায় সবাই বেহুঁস।
ক্ষুধাই যেন মানব জাতির
একটি মাত্র ধ্যান,
আকন্ঠ পান করে বলে কেউ
আরো খানিক দ্যান!
কত্তো ক্ষুধা আশেপাশে
হয়না লিখে শেষ,
সিংহাসনের ক্ষুধায় কেউবা
খাচ্ছে বাংলাদেশ!

কইয়া দিমু! (পার্ট - ০১)

আমাগো দ্যাশের জ্ঞানপাপীগো
ইতিহাস চর্চার ধরন দেইখ্যা
বড়ই শরম লাগে!
হুজুগে বাঙালি নাম কি আর
এমনি এমনি হইছে!
"অজ্ঞানম তিমিরান্ধস্য, জ্ঞানম যেন স্বলাকায়ো" -
এই কথার মানে হইলো,
"অজ্ঞানীর (মুর্খ্যের) কাছে
যা তিমির-এর মত অন্ধকার,
জ্ঞানীর কাছে তা স্ব-মহিমায় আলোকিত"
আর আমাগো কাট-পিছ্
খাওইন্যা ইতিহাসবিদরা কইবো,
"অজ্ঞানের কাছে যা তিন-মন দশ-সের,
জ্ঞানীর কাছে তা সোলার মতো হালকা!"
পার্থক্য বোঝা গ্যালো!?
হ! মিনিং কাছাকাছি
কিন্তু গভীরতায় আকাশ-পাতাল পার্থক্য!
"পার্থক্য" বুঝাইতে গ্যালেতো আর এক বিপদ!
উচ্চারণ করবা "হাইত্থুক্য"!
কেউ যদি কয়, ভাই! ওইডা "হাইত্থুক্য"না, "পার্থক্য"!
তারপর কইবা, আরে! ওই হইলো!
"হাইত্থুক্য" আর "হাইত্থুক্য'র" মইধ্যে
কোনই "হাইত্থুক্য" নাইক্যা!
তোমরাতো উচ্চারণ শিখো নাই!
আমার মতো আঞ্চলিক বাংলায় কতা কও!
আমার জাত-ভাই, বাঙালি না?
তোমাগো! সরি!
আমাগো তো জিহবা আরষ্ট!
ছোট্ট কাল থিকা বিভিন্ন ভাষা শিখতে গিয়া
সব আউলাইয়া গ্যাছে!
কুয়ার ব্যাঙরে যদি জিগাই,
পৃথিবীডা দ্যাখতে ক্যামুন?
হ্য়ে কুয়ার বর্ণনাই দিবো!
তোমরা ইতিহাস চর্চা করো, না!?
ফাইজলামি করোনের আর
জায়গা পাও না!?
গাছের মাঝখানের ডালে বান্দর ঝোলা ঝোলো!
ইতিহাস লইয়া কতা কইতে হইলে
গাছের শিকড়ের কাছে যাও, বুঝছ!
হিস্টিরির তো তোমরা হিস্টিরিয়া বানাইয়া দিছো!
ধূর ছাই! কাগো কি কই!
গত তেতাল্লিশ বছরের ইতিহাসরেই তো
চিপরাইয়া তিতা বানাইয়া ফ্যালাইছো!
আমারে খ্যাপাইওনা কইলাম!
হাটে হাড়ি ভাইঙ্গা দিমু কিন্তু!
সব জাইন্যা ফ্যালাইছি!
ইতিহাসের মিলিমিটার, সেন্টিমিটার সব!
একটু নাড়া দিবা তো বার্স্ট (Bang!) ... ... (চলবে)

২৯.১২.২০১২  © প্রদ্যোত

দেহজ প্রেম্যালার্জি

তোমার স্ট্রাকচার, মেইক আপ, গেট আপ, সেট আপ
যতোই চিত্তাকর্ষক হোক না ক্যানো
আমাকে যৎসামান্যই পুলকিত করে
এবং তাও খুবই অল্প সময়ের জন্য
তাই বলে আমি অক্ষম নই
আমার সকল ইন্দ্রিয়ই সজাগ
এবং একটু বেশি সজাগ বলেই যতো বিপত্তি
হয়তো কোনো রোমানন্টিক কবি
তোমার কেশ বিন্যাস নিয়ে
মহাকাব্য রচনা করে ফেলবে
আমি ভাববো নিয়মিত শ্যাম্পু
কন্ডিশনার ব্যবহার করো কিনা
খুসকি আর উকুনের দৌরাত্ম্য কতোটা সেখানে
পটল চেরা চোখের গভীরে প্রশান্ত
জলাশয় খুঁজবে কবি
আমি দেখবো চোখে পিচুটি আছে কিনা
কল্পনা প্রবন কবিদের শব্দালংকার
আলোড়িত করবে না আমাকে
ওরা দুর থেকে দেখেই কল্প-স্বর্গ রচনা করে
আমি রিয়েলিটিতে রিয়েল কাউকে খুঁজি
ভিজুয়্যাল পারফেকশন আমাকে
সেনজুয়াল স্যাটিসফেকশন দেয় না
তাইতো আমি ভাবি
নিয়মিত নাক-কানের ময়লা পরিষ্কার করো কিনা
দাঁত কয়বার ব্রাশ করো
দাঁতে পাইরিয়া আছে কিনা
নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ ছড়ায় কিনা
ত্বকে কয় স্তরের পুরু ময়লার আস্তরন জমেছে
আন্ডার আর্ম কতোদিন পরিষ্কার করোনা
ঘামে ভেজা শরীরে ব্যাকটেরিয়া
আর পারফিউমের ককটেল কতোটা কটু
নখের ময়লায় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যাবে কী
কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলস, ফেস্টুলা, লিউকোরিয়া
তোমার কতোটা আপন
দাউদ, এ্যাকজিমা, খুঁজলি'র সাথে
ক্যামন সখ্যতা তোমার
হাইজিনের ক্ষেত্রে কতোটা সচেতন তুমি
আমি ভাববো পায়ের গোড়ালি ফাটে কিনা
নখের কোনে চিপা হয়েছে নাকি
আমি জানতে চাই
তুমি পাবলিকলি নাক-কানের ময়লা ঘাটানো কিংবা দাঁত খিলাল করো নাকি
সজোরে হাঁচি দিয়ে দুই হাত ডলো কিনা
সর্দি কফ প্রকাশ্যে ঝাড়ো
গ্যাস নির্গমনের বেলায় নিশ্চই জানান দাওনা
প্রতিদিন স্নান করোতো
আন্ডার গার্মেন্টস প্রতিবার
ব্যবহারের পর পরিষ্কার করো কিনা
ধোয়া পোষাক কয়বার ব্যবহার হয়
মোজা থেকে উৎকট গন্ধ নিশ্চই ছড়ায়
আচ্ছা ঘুমের সময় কী নাক ডাকো
আমার এ্যালার্জি আমায় কারো
প্রতি আকৃষ্ট হতে দেয় না

০২.০৪.২০১৫  © প্রদ্যোত

প্যারোডিঃ লুংগি ড্যান্স

লইছি চাঞ্চ

দিস্ ইজ দ্য ট্রিবিউট টু "চালাই যা"
চেহারাডারে ইয়ো বানাইয়া,
হানি সিং-কাটিং চুলডা ছাডাইয়া,
হাত-কান-গলাতে গয়না লাগাইয়া,
গন্ধ শরীরে পারফিউম মাখাইয়া (২)
ডিনারে করি লাঞ্চ, চালাই যা!
লমু লমুই চাঞ্চ, চালাই যা! (২)
লইছি চাঞ্চ, লইছি চাঞ্চ ... ... (১৬)
ভাব আছে বাইরে ভিতরডা ফাঁকা,
উড়াই বাপের অবৈধ টাকা,
সাত বাই চব্বিশ ফিলিংসে থাকা,
ডিলিংসের পথ সবগুলা বাঁকা (২)
আমিতো হালায় এই যুগের মামু,
মৌজ-মাস্তিতে জীবন কাডামু,
ক্যাঠায় হুনবো কোন হালার বাণী,
আমিতো শমশের, সবকিছু জানি,
আজাইরা কামের আমিতো গুরু,
শেষ হওয়ার পর করমুইতো শুরু,
আমার দলে ড্যুড আছো যতো,
আসো লাফাই ব্যাঙের মতো।

১৬.০৫.২০১৫ © প্রদ্যোত

ফাঁকি

সম্পূর্ণ অপূর্ণতায়
ব্যর্থ হবার সার্থকতায়
বাধ্য হয়েই অবাধ্যতায় থাকা,
মগ্ন হয়ে ভগ্ন জ্ঞানে
লোক দেখানো লোকজ ধ্যানে
বেলা শেষের হিসাব থাকে ফাঁকা!

২৯.০৮.২০১৫ © প্রদ্যোত

অব্যক্ত

বলবো বলে মনের কথা
যখন কাছে যাই,
কথারা সব কোথায় মেশে
অনুভবের কোন আবেশে
আমার চেনা আমিই যেন
আমার মাঝে নাই!

৩০.০৫.২০১৬ © প্রদ্যোত

রুল-ব্রেকিং সনেটস

সনেট 

কবিতাকে বেঁধে দিলে চৌদ্দটি লাইনে
ছন্দ মিলিয়ে নিলে বামে আর ডাইনে
ছয়-আটে ভাগ করে আবেগের সুর
সনেট ছড়ায় সুধা প্রাণে সুমধুর
সুরভিত কথারাশি ফুলশাখে দোলে
অনুভুতিগুলো এসে বাতায়ন খোলে
পরিমিত গন্ডিতে অসীম অনুভব
সুর-লয়-ছন্দে মহা মিলন বৈভব
অমৃত ধারার সুর ও শব্দ চয়নে
পুলক বিরাজ করে হৃদয় গগনে
তৃষিত ব্যকুল মন অমৃতের আশে
যখনই আকুল হয় শব্দ প্রকাশে
অমৃতের সুধা এসে মিটায় সে তৃষা
অস্থির ব্যকুল চিত পায় পথ দিশা

এইতো এখানে সব 

এইতো ভাসছি এইতো ডুবছি জলে
এইতো জীবন এইতো মরণ পলে
এইতো হাসছি এইতো বাসছি ভালো
এইতো রঙিন এইতো সফেদ কালো
এইতো আমরা এইতো তোমরা সবে
এইতো এখানে মধুর মিলন হবে
এইতো সকাল এইতো বিকেল বেলা
এইতো আঙিনা এইতো শিশুর মেলা
এইতো সাগর এইতো নদীর ঢেউ
এইতো সকলে এইতো নইযে কেউ
এইতো তুষার এইতো সবুজ বন
এইতো ফাগুন এইতো আগুন ক্ষণ
এইতো তুফান এইতো প্রলয় ঝড়
এইতো এখানে এসেছে রবির কর

সময় হনন

আপনারে অবহেলে হারিয়েছি পথ
অপচয় সময়েরই খুঁজে দ্বৈরথ
কেউ কেউ ক্ষনিকের তরে কাছে এসে
নিয়ে গেল সবকিছু মিছে ভালবেসে
জগতের ছলাকলা বুঝিনিতো আমি
তাইতো জীবনতরী গিয়েছে যে থামি
এযাবত কালে যাকিছু শিক্ষা জগতে
তাসব গাঁথা হৃদয়ের প্রতি পরতে
ভুলে ভুলে ভরা পিছনের পথ যত
কেবল আমার হৃদয়ে এঁকেছে ক্ষত
ওসব যাতনা ঠেলে ফেলে বহুদূরে
আগামী ক্ষণকে মাতাবো নতুন সুরে
মধুর সময় অপচয় করা নয়
সময় হননে আসে শুধু পরাজয়

পথের কাঁটা .

আর কারো ছলনাতে টলবেনা মন
আপনারে সৃজিবার করেছি যে পণ
অতীতের পথে পথে ব্যথা পেয়ে শত
জীবন পেয়েছে ঢের জ্ঞান অবিরত
সে জ্ঞানকে পুঁজি করে আগামীর ক্ষণে
পেরোবই বাধা যত সমুখের রণে
অযুত সোনালী ক্ষণকে করেছি মাটি
তাইতো পুড়েছি পুড়েই হয়েছি খাঁটি
আর নয় কভু ঘাটে ঘাটে ঘাটাঘাটি
এবার জীবন করবোই পরিপাটি
যদিও জানি সে পথের মাঝেতে কাঁটা
তবুও সেখানে আমার সুদৃপ্ত হাঁটা
পথের মাঝারে বাধারা যতটা থাক
হৃদয় তোড়েতে নিমেষে নিপাত যাক

পুনরায় জীবনের পথে .

বেহিসাবী পথে সতত ভ্রমেছি ভুলে
তাইতো এখন কেউ নাই মোর কূলে
জীবন নদীর মাঝখানে থামা তরী
ঋণে ঋণে আজ সে নাও গিয়েছে ভরি
কান্ডারী হীন কান্ডজ্ঞানহীন চলাতে
কন্টকহার পরেছি আমার গলাতে
থামা তরীখানি তীরে ফেরানোর পণে
নেমেছি আবার নিজেরই সাথে রণে
আর থাকবোনা অলসতা মাঝে পরে
আপনার চিতে বোকার ভুবন গড়ে
ভুল পথে আর এগোবনা কোনো কালে
নিজে বুঝে নেবো যালেখা রয়েছে ভালে
সফলতা আসে সমুখ চলার গানে
তাকাবোনা তাই কভু পিছনের পানে

প্রেমের বারতা 

তোমাকে বলব বলেই হয়ত আজ
কথার কলিরা সাজছে নতুন সাজ
হৃদয় গহীনে বইছে আবেগ ধারা
আমাকে কেবল করছে পাগল পারা
বাজছে অযুত সুরের লহরী প্রাণে
প্রেমের বারতা জানাতে তোমায় গানে
তোমাকে ঘিরেই আমার স্বপন সাজে
তোমাকে গেঁথেছি আপন পরাণ মাঝে
হৃদয় মাঝারে সকল সুরভী তুমি
তুমিই আমার প্রেমের অমৃত ভূমি
সকল সকাল দুপুর বিকেল সাঁঝে
তোমাকে পেয়েছি প্রতিটি প্রহর মাঝে
এমন করেই হৃদয়ে রাখবো বেঁধে
অনাদি কালের প্রেমের সুরটি সেধে

পালা-বদল 

সতত সচল রথটি গিয়েছে থামি
কোথায় ছিলাম কোথায় গিয়েছি নামি
পথের ধুলায় আছড়ে পরেছে ক্ষণ
হারিয়ে ফেলেছি যাছিল জীবনে পণ
কোথায় ভিড়বে জীবন তরণী মোর
থামবে কখন বাণের জলের তোড়
নিয়তি আমায় ভিড়াবে কখন তীরে
আবার বাঁশরী বাজবে আমার নীড়ে
পাখিরা আবার গাইবে মধুর সুরে
সকল বেদনা নিমেষে মেলাবে দূরে
সুখেরা আসবে দুঃখের মেঘকে ঠেলে
ফুলেরা ফুটবে হাজার পাপড়ি মেলে
দুঃখের পরেতো সুখের ফেরার পালা
জ্বালার পরেই গলেতে প্রেমের মালা

ফাগুন এলে 

ফাগুন আসবে আগুন ছড়াতে মনে
আগুন ছড়াতে পলাশ শিমুল বনে
বনের পাখিরা গাইবে মনের সুখে
ফাগুন মধুর প্রলেপ মাখবে দুঃখে
দুঃখের প্রাচীর ভেঙেই আসবে সুখ
ফাগুন দেখবে আগুন ছড়ানো মুখ
ফাগুন রঙের বাসর সাজায় প্রাণে
সুরের লহরী ছড়ায় কোকিল গানে
সুরভি বিলায় হরেক কুসুম-কলি
মধুর মিলনে মাতেযে সেথায় অলি
আকাশ রঙিন বাতাস সুরভি-ময়
সকল আবেগ নিমেষে কবিতা হয়
এখানে বিবিধ মাসের বছর গোনা
ফাগুনে শুধুই মধুর স্বপন বোনা

বিদায় বেলা 

জীবন দিয়েছ জীবনী দাওনি পিতা
মরার আগেই জ্বলছে আমার চিতা
পারিনা দাড়াতে সমুখে বাড়াতে আর
জগত আলয়ে লাগছে সবই ভার
মায়ার বাঁধন পারেনা জড়াতে মোরে
আঁধার পাথারে ঘুরছি একাকী ঘোরে
কিছুই আমার লাগেনা এখানে ভালো
বিষাদ জীবনে সবই আঁধার কালো
এখন আমার শুধুই তোমাকে চাই
তোমারে প্রণমি চরণে নেবযে ঠাঁই
বিদায় বেলার গুনছি প্রহর আজ
তোমার আরতি কেবল আমার কাজ
কখন আমার যাবার সময় হবে
তোমার পূজার কুসুম করেযে লবে

©  প্রদ্যোত

এইলিয়েন আই (দুই)

ইনভিজিবল এলিয়েন
কিটিং এবং পিটিং
হরেক রকম গবেষণায়
করছে ধরায় মিটিং
বছর চারেক জগত জুড়ে
লক্ষ রিসার্চ পরে
ভাবছে ভালো করবে কিছু
মানুষ ট্রিটিং করে
এই প্রাণীটা ট্রিট করাতো
নয়কো সহজ পার্ট
তাইতো ওদের জগত থেকে
এনেছে এক্সপার্ট
সাথে আছে অগনিত
সায়েন্স সরঞ্জাম
যাতে আবাস যোগ্য করা
যায় এ ধরাধাম
মানুষ ম্যানিম্যালটা যদিও
নয় পুরোটাই ডার্ট
তারপরেও সিস্টেমে তার
লাগবে রিস্টার্ট
করতে সেটা দূর-দুনিয়ার
রে-তে হবে হিটিং
নিউরোনগুলো রিফর্ম হলে
ফাইনালি সব ফিটিং
অকস্মাৎই বদলে যাবে
মানুষের হালচাল
একদেশ আর অন্য দেশকে
করবেনা বানচাল
জাগতিক সব কামনা বাসনা
গৌনতর হবে
জাতি সমাজ ধর্ম বর্ণে
বন্ধু সবাই রবে
সীমারেখা আর অস্ত্র-বারুদ
থাকবেনা কোনখানে
ভালবাসা শুধু সুরভি ছড়াবে
সকল মানব প্রাণে
বিপরীত যত অনুভুতি আছে
মিলাবে সকল শুন্যে
সকল হৃদয় পূর্ণ হবে
মহিমান্বিত পুন্যে
ধন্য তোমরা প্রিয় এইলিয়েন
কিটিং এবং পিটিং
মিশনটা যদি সাকসেস হয়
করব সবাই গ্রিটিং ... ... (চলবে)

১৫.০৮.২০১৪  © প্রদ্যোত
(প্রথম প্রকাশঃ গল্প-কবিতা ডট কম, সেপ্টেম্বর ২০১৪)

এইলিয়েন আই (এক)

ইনভিজিবল লিয়েন
পিটিং এবং কিটিং
আম গাছের এক
ডালের উপর সিটিং
জরুরি এক
করছিল যে মিটিং
বিষয় হলো
মানব জাতির ইটিং
পিটিং বলে, ‘বন্ধু,
তুমি অবাক হবে শুনে
কত্ত কিছু খায় যে মানুষ
পারবে না তা গুনে’
‘বছর তিনেক
এর উপরই করছি গবেষণা
তুমি যখন এসেই গ্যাছো
জমবে আলোচনা’
‘সর্বভুক এই ম্যানিম্যালটা
সব প্রানীদের সেরা
ভিতরেতে পোষে পশু
বাইরে পোশাক ঘেরা'
কিটিং শুনে কুঁচকে ভুঁরু
অবাক হয়ে বলে
'ক্যামন করে বলছ সেরা
স্বভাব এমন হলে!'
পিটিং বলে, ‘আর বলোনা
অবাক করা প্রাণী
খেতেই যেন আসছে ভবে
করছে হানাহানি'
‘চলো না হয় দেখিয়ে আনি
মজা পাবে ঢের
কত্ত রকম চালচলন
এই আজব মানুষের’
‘আরে আরে ওই যে দ্যাখো
কয়টা মানব ছানা
গোল হয়ে সব খাচ্ছে টা কি
আছে তোমার জানা!'
পিটিং এবং কিটিং গিয়ে
বসলো ওদের কাছে
দেখল একটা সাদা নল
সবার হাতেই আছে
কিটিং বলে, ‘ নলগুলো কি
কামড়ে ওরা খাবে!'
পিটিং বলে, 'একটু দাড়াও
হাসির খোড়াক পাবে'
'বেড় হচ্ছে ধোঁয়া দ্যাখো
ওদের মুখের থেকে
আগুন বোধহয় জ্বলছে পেটে
ফায়ারব্রিগেড আনতে হবে ডেকে'
'আরে, না না দরকার নেই
খাচ্ছে ওরা বিড়ি
নেশার ছলে ওটাই ওদের
নরক যাবার সিড়ি'
'সত্যি ভাই আজব প্রাণীর
আজব খাবার-দাবার
আমার এতে আগ্রহ নেই
হলো সময় যাবার'
'তুমিই বরং এসব নিয়ে
করো গবেষণা
রিপোর্ট নিয়ে পরে না হয়
করবো আলোচনা'
পিটিং একাই থাকলো পরে
আজব পৃথিবীতে
আজব মানুষের খাবারের
তালিকা তৈরিতে ... ... (চলবে)

১২.১০.২০১২  © প্রদ্যোত
(প্রথম প্রকাশঃ গল্প-কবিতা ডট কম, ২০১২)

fool'stop

সব বোঝা শ্যাষ!
সব জানা যদিও হয়নাই,
বুঝতে পারি হবে টা কী!
ঘোড়ার ডিম, কাঁচকলা, আন্ডা, ছাই!
সব শালারে চিন্ন্যা ফ্যাল্যাইছি
এহনও কিছু কইতাছিনা
সময় আসতাছে আমারও
তয় কিছুই কমুনা কাউরেই
বোধ থাকলে নিজেরাই বুঝবো
এখন থাইক্যা পুরা fool'stop!
কি যে মাইনক্যা চিপায় পরছি
আর চাঞ্চে সব শালায় ... ... (!)
দিন আমারও আইতাছে
আরো ফালাফালি কইরা লও
তয় চক্ষুর পাওয়ারডা ঠিক রাইখো
নইলে দ্যাখবা ক্যামনে
ভাওতাবাজি, ভুজুং-ভাজুং ছাড়ো
আমার পাপ আর ভুলের
সব হিসাব-নিকাশ আমার জানা
মাশুলও গুনছি কড়ায়-গন্ডায়
হাড্ডিতে হাড্ডিতে ট্যার পাইছি
পাপের শাস্তি কারে কয়
আর অল্প একটু বাকি
হেয়ার পর আমি ফ্রি
ফ্রি মানে বোঝো?
না, বুঝামুনা! বুইঝ্যা লইও!
তোমরা মানুষ হইলে বুঝাইতাম
তোমাগো দিকে চাইলেতো
সব জানোয়ার দেহি!
এহন রেডি হও,
তোমাগো পালা আইতাছে
যা যা করছো, তার রেজাল্ট লইয়াই
পরপারের ভিসা পাইবা
ঐপাড়ের উনিতো মহান,
সব মাফ কইরা দিবো!
কিন্তু তোমরা সাইজ হইবা এইপাড়েই!
আমি আর কিচ্ছু কমুনা!
এই হানেই fool'stop!

© প্রদ্যোত

সোমবার, জুলাই ১৮, ২০১৬

স্বপ্নে গ্রথিত ধরিত্রী

জীবন, পৃথিবী এবং সৃষ্টির সবই
আপেক্ষিক সত্য
আপেক্ষিক সত্যকে আকড়ে ধরেই
আমাদের বেঁচে থাকা
অবিমিশ্র সত্য বা
নিরেট বাস্তব বলে কিছু নেই
মহাবিশ্বের যাবতীয় সবই স্বপ্ন
কিংবা কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়
স্বপ্ন বা কল্পনা সবার সহজাত, নিজস্ব সম্পদ
আর তাই জগত সংসার সম্পর্কে
আমাদের ধারনাগুলোও স্বতন্ত্র
সবার পৃথিবীই আপাত সামগ্রিকতায় সত্য
তবে নিত্য নয়
কারণ একদিন সবই হারাবে পরম শুন্যতায়
তারপরেও আমরা বাঁচি আমাদের স্বপ্নে
স্বপ্নেরা বেঁচে থাকে আমাদের মাঝে
অতঃপর স্বপ্নের সাথে আমরা
আর আমাদের সাথে স্বপ্নেরা
সবাই সজ্জ্বিত হই বিবিধ বিন্যাসে
যে যেমন করে চায় সেভাবেই
স্বপ্নে গ্রথিত চিন্তা -
বিশ্বাসে রূপ নেয় কখনো
যে বিশ্বাস বেঁচে থাকার
একটা আপাত গ্রহনযোগ্য মানে দাড় করায়
সেই মানেটা অন্যের মনে নাও ধরতে পারে
আমি অতশত বুঝিনা
চাইও না বুঝতে
আমার যতটা সময় বাঁচার
স্বপ্ন নিয়ে আপেক্ষিক বাস্তবে
আমি চাই অবারিত ভালবাসায়
ভরে উঠুক পৃথিবী
আমি চাই
সংকীর্ণতা, জাগতিক কলুষতা,
হানাহানি, ভেদাভেদ -
সব কিছুর উর্দ্ধে আমরা থাকি
চাই আমার ও আমাদের স্বপ্নময়
অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তুলতে
চাই শ্বাশত ঐক্যের আর
চিরায়ত সাম্যের সংমিশ্রন
এক উপভোগ্য ধরিত্রী

© প্রদ্যোত

রুখে দাড়াও দেশপ্রেমিক

সুর্যসেন-এর সেনানীরা সব
দল বেঁধে এসো সকলে
ভিনদেশী ফের হেনেছে আঘাত
দেশটাকে নিতে দখলে
গহীন বনের হায়েনারা যতো
বেড়িয়েছে লোকালয়ে
চার-দশকের বুভুক্ষা-তৃষা
মিটাতে নৃসংশয়ে
রক্ত-লোলুপ মাংসাশী সব
জারজ ভিনদেশের
আগ্রাসনের তোড়ে নেবে কেড়ে
যতো কিছু তোমাদের
জ্বালাবে গৃহ পোড়াবে শরীর
রক্ত করবে পান
ছদ্মবেশে বাঁকা হাসি হেসে
চাইবে 'পাকিস্তান(?)'
এখনই যদি রুখতে না পারো
বাড়বে ওদের জোড়
তখন ভীরু কাপুরুষ হয়ে
বন্ধ করবে দোড়
বেড়িয়ে এসো সুপ্ত চেতনা
দেখাও তোমার তেজ
দেখবে হায়েনা বিড়াল হয়ে
গুটাবে তাদের লেজ

© প্রদ্যোত

চিরায়ত সরলতা

জন্মাবধি সরল থেকেছি বলেই
ওরা সবাই ফয়দা লুটেছে বহুবিধ ভাবে
যে এসেছে, সরল বিশ্বাসে কাছে টেনেছি
দিয়েছি নিজেকে উজাড় করে
আর ওরা আমাকে ব্যবহার
করেছে ইচ্ছামত
বস্তুবাদী বাস্তবতার থেকে
আমি অনেক দুরের বলেই
সবাই নিংড়ে শুষে নিয়েছে
আমার সব সহজাত উচ্ছ্বাস
নিঃস্ব আমার সম্বল শুধু
সত্যাশ্রয়ী সরলতা
না, আমি ভাঙিনি
আর একবার গর্জে উঠবো বলে
ওরাতো আমার ক্ষতি করেনি
বরং শিক্ষা দিয়েছে
দিয়েছে আলোর সন্ধান
ওদের দেয়া বাস্তবতার শিক্ষায়
আমি একটু একটু করে শিক্ষিত হয়ে উঠছি
অগুণতি শিক্ষকের রকমারি শিক্ষা পেয়ে
আমি ক্রমাগত হয়ে উঠেছি-
সক্রেটিস কিংবা আরজ আলী মাতুব্বরের মতো
না, ঠিক তাওনা
ওনারা অহিংস ছিলেন,আমিতো তা নই
দাবানলের মতো জিঘাংসা
প্রতিনিয়ত জ্বালায় আমাকে
ওরা আমার সরলতাকে ভাবে দুর্বলতা
নমনীয়তাকে মনে করে কাপুরুষতা
কিছুই যায় আসেনা তাতে আমার
আজন্ম সরলতাই আমার আমিত্ব, আমার গৌরব
যা আমাকে সাহসী থেকে দুর্ধর্ষ
বিদ্রোহীতে পরিনত করে
আমি সরল, তাই বলে
ভীরু কিংবা কাপুরুষ নই
ওদের কাছথেকে স্বেচ্ছায়
আরো কিছু শিক্ষা নেবো
অতঃপর আমি
বিজ্ঞ, বিচক্ষণ, চৌকস ও একক সৈনিক এক
সত্য প্রতিষ্ঠায় আত্মবিসর্জনে প্রস্তুত এক মানবাত্মা
ওদের নিকৃষ্টতার জন্য
আমিও কি পশু হবো তাহলে!
মোটেওনা!
ওদের জন্য রিপুতাড়িত হবোনা কখনোই
প্রতিশোধ আমার ধাঁচের নয়
আমি সত্যাশ্রয়ী সরলতার মাঝেই থাকতে চাই
দ্রোহের দহনে নিজেকে প্রজ্জ্বলিত করে কি লাভ!
আমি সক্রেটিস কিংবা
আরজ আলী মাতুব্বরই হবো নাহয়

© প্রদ্যোত

ফ্রোজেন

মানুষ সংকীর্ণতা থেকে বেড়
হতে পারেনা ক্যানো!
আমি বুঝি না, আর বুঝতেও চাইনা
যথেষ্ট হয়েছে চল্লিশ বছরে!
আর নয়!
কখনই নয়!
নেভার এভার, ফরএভার!
আমি ফ্রোজেন!
সেই শৈশব কৈশোর যৌবনে
যা দেখেছি, যেমন দেখেছি যেভাবে দেখেছি -
ঠিক তেমনই সব, একই ধাঁচের
খোসা বদলালে নতুন সাপ হওয়া যায়না
শিং ভেঙ্গে যায়না হওয়া বাছুর
বেকুবদের বোঝাতে
কত শত মনীষী
শত সহস্র বছর ধরে
কত শত কর্মযজ্ঞে
নিরলস সাধনায়
বিলিয়েছে জ্ঞান
পথ নির্দেশিকা রেখে গেছে
উত্তরণের সিড়িতে সিড়িতে
কই কিচ্ছু হয়েছে?
আর কিছু হবেকি অনাগত দিনে!
আমি জেনে গ্যাছি কি হবে!
না!
বলবোনা কাউকেই কখনো
অন্তত কোনো দ্বিপদী শ্বাপদকেতো নয়ই

© প্রদ্যোত

হাসতা লা ভিস্তা

কেউ বদলায়না
না কোনো স্বজন, না কোনো আপন
সময়ের সাথে প্রকৃতি বদলায়
বদলায়না মানুষের পশুত্ব
গৃহপালিত প্রাণিদের মধ্যেও
মানবিক গুনাবলী বিকশিত হয়
অথচ, মানুষ ক্রমাগত পশুত্ব করে বরণ
বলে বলে স্বর নষ্ট করে ফেলেছি
কেউ কি বদলিয়েছে!
বদলাতে গিয়ে নিজে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছি
বদলে পদে পদে বিকৃত হয়েছি
ধিকৃত হতে হয়েছে কখনোবা
ওদের পাশবিকতা ঠেকাতে নিজেকে করেছি পশু
তবেকি পাশবিকতাই শক্তিশালী!
এমন পাশবিক জীবন আমি চাই না
আমার প্রিয়তম পশুরা! ভালো থাকো
সর্বভুক শ্বাপদের মতো গোগ্রাসে গলাধকরণ করো
পাচ্য-অপাচ্য-গুরুপাক সব
আর কুম্ভকর্ণের মতো নাক ডেকে ঘুমাও
ঈশ্বর তোমাদের সহায় হোন
হাসতা লা ভিস্তা

 © প্রদ্যোত

অতিক্রম

অসীম সীমায় হারিয়ে যাওয়া
নিজকে নিজেই ছাড়িয়ে যাওয়া
মুক্তপ্রাণে দিগ্বিজয়ের ঘোর,
লক্ষভেদী দক্ষতাতে
সত্যনাশী সত্যতাতে
সূর্যালোকে লক্ষ তাঁরার ভোর!

২৭.০৮.২০১৫  © প্রদ্যোত

পতঙ্গ মন

দূর থেকে যা ভাবছি আলো
কাছে গিয়েই আঁধার কালো
পতঙ্গ মন আলোই তবু যাচে,
যতোই চোখে লাগুক ধাঁধাঁ
যতোই পথে পড়ুক বাঁধা
আলো ভেবে যাই আলেয়ার কাছে!

১২.০৮.২০১৫  © প্রদ্যোত

সর্বনাশী

কি জানি কি যাদু ছিল চাহনিতে
কি জানি কি মায়া ও মধু হাসিতে
কি হতে কি হলো জানিনা, সর্বনাশী!
না ছুঁয়েই ছুঁলে ভুলে কি নাভুলে
ভ্রমরেরা সব উড়ে এলো ফুলে
গেয়ে গেয়ে গান বলে দিতে 'ভালবাসি'।

২৮.০২.২০১৬ © প্রদ্যোত

আলোর শিশু

একটি কলি ফুটেছিলো
সবুজ-শ্যামল দেশে,
আলোর শিশু এসেছিলো
আলোর হাসি হেসে।
সেই আলোটা ক্রমেক্রমে
আলোর তুফান হয়ে,
ছড়িয়ে গেল সকলখানে
পড়লো আঁধার ক্ষয়ে।
সবার প্রিয় আলোর কবি
বজ্রপাতের মতো,
বজ্রকন্ঠে ঝংকার তুলে
সরায় আঁধার যতো।
আলোয় আলোয় সৃষ্টি হলো
আলোর সমুদ্দুর,
আলোর নাওয়ে সওয়ার হলো
আলোর মুজিবুর।
তার জ্যোতিতে সজাগ হলো
মুক্তিকামী প্রাণ,
দৃপ্তকণ্ঠে গাইলো সবাই
স্বাধীণতার গান।
আমরা যারা আজকে শিশু
স্বাধীণ বাংলাদেশে,
ঘুমায় বুকে জাতির পিতা
স্নিগ্ধ হাসি হেসে।
আমরা যখন তরুণ হবো
ঘুম ভাঙাবো তার,
মিটাবো সব স্বপ্ন-আশা
সোনালী বাংলার।
(১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে ছোটদের জন্য রচিত)
০৩.০২.২০১৫  © প্রদ্যোত 

জীবন্মৃত

অনুভূতিগুলো লুকাতে লুকাতে
নয়নের জল শুকাতে শুকাতে
কবেই নিজেকে হারিয়েছি চিরতরে,
উতাল হাওয়া যতো দিক দোলা
চাঁদের কিরণে যতো প্রাণ খোলা
তার কোনো সাড়া পড়েনা মনের ঘরে।

২২.০৩.২০১৬  © প্রদ্যোত

মোহ

যতোই ভাবি এড়িয়ে যাবো
বাঁধন ছিড়ে বেড়িয়ে যাবো
ততই পরি নতুন মোহে বাঁধা,
হয়না পথে মুক্ত হওয়া
আপন ধ্যানে যুক্ত হওয়া
হয়না প্রাণে শাশ্বত সুর সাধা!

০৩.০৩.২০১৬ © প্রদ্যোত

খাচ্ছি সবই

খাবার জন্যই যেন জন্মেছি আমরা
খাদ্য-চক্রের অংশ ছাড়া আমরা কিছুইনা
নিজেদের কেমন করে দাবি করি
শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসাবে?
হ্যা, করা যায় সে দাবি-
কারণ, আমরা সর্বভুক
যে সব খেয়ে ফেলতে পারে নির্দিধায়
সে'ই তো শ্রেষ্ঠ, নয়কি?
বাঘ বা সিংহ ঘাস-লতা-সবজি খায়
বলে শুনিনি কখনো।
গরু বা ছাগলকে মাংশ খেতে
দেখেছেন কেউ?
অথচ, আমরা সব খাই।
ঘাস-লতা-গুল্ম-সবজি-মাংশ সব!
পৃথিবীর কোনো প্রাণী স্বজাতিকে মারে?
আমরা মারি!
হাজারো অত্যাধুনিক অস্ত্র বানাই
নিজেদের মারতে।
মেধাবী ছেলেগুলোকে মিলিটারি কমান্ডো বানাই
মনুষ্যকুল নিধনের জন্য!
কি খাইনা আমরা!
আজন্ম ক্ষুধা নিয়েই এসেছি ধরাধামে
আপনাকে যদি বলি, 'আপনি একটা
গরুরবাচ্চা!'
নিশ্চই তেড়ে আসবেন আমার দিকে,
শিং কাঁত করে!
আসলেই কি আমরা গরু বা ছাগলের
বাচ্চা নই!
পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীর সন্তান
তার মাতৃস্তন্যের দাবিদার।
শুধুমাত্র মাতৃদুগ্ধই পারে একটি সন্তানকে
সাবলীল, মেধাবী, শক্তিমান, চৌকস ও
রোগমুক্ত রাখতে।
আমাদের মায়েরা -
শারীরিক সৌন্দর্য্য ধরে রাখতে
শিশুকে নিজের স্তন্য পান করাতে নারাজ
বিকল্প হিসাবে গরু বা ছাগলের দুধ
ফিডারে ভরে খাওয়ান!
'গরুর দুধ পান করবে বাছুর,
ছাগলের দুধে তৃষ্ণা মিটাবে
ছাগলছানা' - এটাই প্রাকৃতিক।
আমরা তাদের প্রাপ্য হতে বঞ্চিত করে,
মুখে ঘাস তুলে দিয়ে,
নিজেরা পান করি সানন্দে!
হায়রে খাদ্যাভ্যাস আমাদের!
আমরা পশুত্তম!
অতঃপর, সেই ছাগল বা গরুটিকে
অতি পাশবিকভাবে হত্যাকরে,
নানান আকৃতিতে টুকরো টুকরো করে
কেঁটে,
রকমারি মশলায় মাখিয়ে,
বিবিধ কৌশলে রেঁধে,
ভক্ষণ করি মহানন্দে!
আহ! রানের মাংশের কি স্বাদ!
কলিজা-মগজ দিয়ে কত বাহারি খাবার!
ঘ্রানেই জিভে জল চলে আসে!
আচ্ছা, আমরাও তো প্রাণী, তাইনা?
এবং শ্রেষ্ঠ প্রাণী বলে দাবি করি!
তবে, নিশ্চই আমাদের মাংশ
সবচেয়ে সুস্বাদু হবে!
আরে, তাহলে আর দেরী কেন!
আসুননা, ঝাঁপিয়ে পড়ি একে অপরের
প্রতি।
কেঁটে টুকরো টুকরো করে,
বাহারি মসলায় মেখে,
তৈরী করি সুস্বাদুতম খাবার!
কচকচ করে খাই নিজেদের মাংশ!
আরে, শ্রেষ্ঠ প্রাণীর মাংশ যদি না'ই
খেলাম শ্রেষ্ঠ প্রাণী হিসাবে জন্মই
তো বৃথা!

© প্রদ্যোত

আজাইরা আকাম

দলাদলি গলাগলি
ঢলাঢলি ডলাডলি
অতঃপর করা গালমন্দ,
কোলাকুলি খোলাখুলি
দোলাদুলি ফোলাফুলি
অযথা বাড়ছে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব।
ধরাধরি গড়াগড়ি
লড়ালড়ি মরামরি
ছড়ায় কেবলই দুর্গন্ধ,
কাড়াকাড়ি বাড়াবাড়ি
মারামারি ছাড়াছাড়ি
সকল অকাজ হোক বন্ধ।

১২.০২.২০১৫  © প্রদ্যোত

একুশোত্তম

একুশ তুমি প্রদীপ্ত চেতনায়,
আগুন জ্বালিয়ে কৃষ্ণচূড়ার ডালে,
ভাষার দাবিতে শ্লোগান-মূর্ছণায়,
রাজপথ করে রঞ্জিত লালে লালে।
এগিয়ে নিয়েছো বিপ্লবী সন্তানে,
মা ও মায়ের ভাষারই সন্মানে,
উন্নত শিরে তারুণ্য হেটে চলে,
বুলেট-বিদ্ধ শুদ্ধ রক্ত-স্নানে।
একুশ তুমি সালাম, রফিক,
মিশে আছো কতো নামে,
মায়ের ভাষাকে কিনেছিল যারা
বুকের খুনের দামে।
অশ্রু-নয়নে প্রভাত-ফেরীতে
কোটি বাঙালীর প্রাণে,
মিশে আছো তুমি শহীদ-বেদীতে
পলাশ-শিমুল ঘ্রানে।
তোমাতেই প্রাণ, বিদ্রোহ
আর ঐক্যের হাতিয়ার,
এ মাটির বুকে মুক্তি
আনতে গর্জেছে বারবার।
একুশ তুমি বুকের রক্তে
রাঙায়ে দিয়েছো বেশ,
স্বাধীনতা তুমি সাগর রক্তে
গড়েছো বাংলাদেশ।
মনে মনে দীপ জ্বেলেছো
একুশ করেছো অঙ্গীকার,
রক্ত-সূর্য এ মাটি
ফুঁড়ে উঠবেই একবার।
স্বাধীনতা এলো বিজয়ের পথে,
পরাধীন হলো শেষ,
বিজয় এসেছে বজ্রের মতো,
ভেঙে ভয়-বিদ্বেষ।
তবুও বিজয় পাইনিকো যেন,
হাহাকার শত প্রাণে,
ছুটে যাই তাই শহীদ মিনারে,
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানে।
যখন সমুখে দন্ডায়মান
বিবিধ অত্যাচার,
ঐক্যের সুরে বিদ্রোহী হই,
প্রেরণা শহীদ মিনার।
মুঠো মুঠো প্রাণ তুলে নেই সেথা,
বলিষ্ঠ চেতনার,
দ্রোহ আর ক্ষোভে প্রতিজ্ঞ হই,
শৃংখল ভাঙবার।
ফাগুনের সেই
আগুন ছড়ানো দিন,
ভুলি নাই মোরা
সেই সে রক্ত ঋণ।
তোমার প্রেরণা
অনূরণ তোলে গানে,
ছ’ দশক পরে শত-সহস্র
নবীণ সতেজ প্রাণে।
একুশ তুমি এমনি করেই
যুগ-যুগান্ত ধরে,
জাগিও প্রেরণা তরুণ হৃদয়ে,
প্রতি বাঙালির ঘরে।

০২.০২.২০১২  © প্রদ্যোত
(কৃতজ্ঞতাঃ আমার প্রাণপ্রিয় মামা, এই কবিতার ১২টি লাইন যিনি আমাকে উপহার দিয়েছেন এবং পূর্ণাঙ্গ কবিতাটি লিখতে উৎসাহিত করেছেন)

তেজস্বী!

সূর্য দেখেছো?
ধ্যাৎ! কি জিজ্ঞেস করছি!
ওটাতো প্রতিদিনই দ্যাখো-দ্যাখোতো!?
না, দ্যাখোনা।
প্রাতে কিংবা অপরাহ্নে যখন সে উত্তাপহীন-
হয়তো তখন দেখে থাকতে পারো!
মধ্যাহ্নের সূর্যের পানে তাকাওনা কখনও।
বরং লুকাও নিজেকে উত্তাপ এড়াতে,নয় কি?
আমি মধ্যাহ্নের প্রখর সূর্যের পানে
অনন্তক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারি।
হয়তো এটা জেনেটিক কারণ!
মুক্তিসেনাদের আশ্রয় দেয়ার অপরাধে(?)
তোমরা ধরে নিয়ে গিয়েছিলে আমার বাবাকে।
দীর্ঘ আটটি মাস বাবা নিখোঁজ!
মরে গেছে কি বেঁচে আছে - আমরা অনিশ্চিত
থেকেথেকে ক্ষণেক্ষণে
মা ও দাদীর বুকফাঁটা আর্তনাদ!
প্রতীক্ষার দূর্বিসহ সব প্রহর!
নির্ঘুম, অর্ধাহার-অনাহারে
অন্ধকার কুঠুরিতে মানবেতর জীবন-যাপন।
জীবন-মৃত্যুর সংজ্ঞা ভুলে-
বোবা চাহনীতে শুধু একমুঠো
আলোকে হাতরে বেড়ানো!
আর বাবা!
তোমাদের গোপন টর্চার-ক্যাম্পে
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে
নির্বিকার, স্থবির এক অনড় সত্ত্বা।
প্রিয় সংসারের প্রিয় মুখগুলোর কথা ভেবে
জীবনটাকে কোনরকমে টেনে নিয়ে চলেছেন!
ভাষায় বর্নণীয় নয়, এমন সব অত্যাচারে
তোমরা তাকে জর্জরিত করেছো।
শরীরে তিল পরিমান জায়গা অবশিষ্ট ছিলনা
যেখানে বর্বর পাক (অবশ্যই নাপাক)-শিল্পী আর তাদের দোসর, তোমাদের
প্রাণ-সংহারি তুলির(!) আঁচড় পরেনি!
ঘন্টার পর ঘন্টা
হীম-শীতল পানিতে দাড় করিয়ে রেখেছো,
ড্রামের পর ড্রাম ফুটন্ত জলে
ঝলসে দিয়েছো সমস্ত শরীর,
দুই বাহুর সর্বত্র জ্বলন্ত সিগারেটের স্যাঁকা,
পিন ফুঁটিয়েছো প্রতিটি নখে,
রুটিন মাফিক তিনবেলা ইলেক্ট্রিক শক্,
মল-মূত্র-আবর্জনা কি দাওনি খেতে!
টানা সাত রাত ঘুমাতে পর্যন্ত দাওনি
চোখের সামনে জ্বালিয়ে রেখেছো
হাজার ওয়াটের বাল্ব।
বাবা মুখ খোলেননি!
হয়তো দূর্বিসহ আলোকে সহ্য-সীমায় নিয়ে এসেছিলেন,
দৃষ্টিশক্তিতেও প্রভাব পরেনি বিন্দুমাত্র!
তোমরা পরাজিত হয়েছো -
বাবার দৃঢ়তার কাছে,
পরাজিত হয়েছো -
দৃপ্ত বাঙালীসত্ত্বার বলীষ্ঠ দেশপ্রেমের কাছে।
আমার পঙ্গু বাবা, এখনও তীব্র আলো সহ্য করতে পারেন।
আমিও পারি! ঘন্টার পর ঘন্টা -
মধ্যাহ্নের প্রখর সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে!
ভয় পাচ্ছো!
আমি জানি, প্রচন্ড ভয়ে সব পাক (নাপাক)-সহশিল্পীর
ইন্দ্রিয়গত অনুভূতি দুমড়ে-মুচড়ে আসছে-
অন্ধকারের কীটরা আলো ভয় পায়,
ওদের অপকীর্তি চলে আঁধারে।
আমি আলোর পূজারী,
আলো ভালবাসি-
এখন আলোর সময়-
‘নবীনরা সব আলোকের পথ-যাত্রি,
আলোকিত পথে এগোচ্ছে দিবা-রাত্রি!
চারিদিকে শুধু আলোকের জয়গান
ঝলসে যেতে প্রস্তুত হ শয়তান!'

© প্রদ্যোত

এইতো এখানে সব

এইতো ভাসছি এইতো ডুবছি জলে
এইতো জীবন এইতো মরণ পলে
এইতো হাসছি এইতো বাসছি ভালো
এইতো রঙিন এইতো সফেদ কালো
এইতো আমরা এইতো তোমরা সবে
এইতো এখানে মধুর মিলন হবে
এইতো সকাল এইতো বিকেল বেলা
এইতো আঙিনা এইতো শিশুর মেলা
এইতো সাগর এইতো নদীর ঢেউ
এইতো সকলে এইতো নইযে কেউ
এইতো তুষার এইতো সবুজ বন
এইতো ফাগুন এইতো আগুন ক্ষণ
এইতো তুফান এইতো প্রলয় ঝড়
এইতো এখানে এসেছে রবির কর
(৩+৩+৩+৩+২) x ১৪

২২.০৭.২০১৪  © প্রদ্যোত